১৭ নভেম্বর ২০১২। 
একেবারে ঠান্ডা বললেই চলে। ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছা করতেসে না। আমার আবার ঘুম বেশি। তবে আমি সর্বদা আযান শুনে ঘুম থেকে উঠি, যোহরের আযান। যাই হোক শিতের একটা বাতাস আছে।
রাইমার বাসায় যাবো। রাইমা আমার গার্লফ্রেন্ড। রাইমার বাসায় আমি বেশি ভাগ সময় আড্ডা দিতাম। ওর রান্না মজার খাবার গুলো খেতাম।
সন্ধ্যা ৭ঃ১৫ আমরা মিরপুর DOHS থেকে রিক্সায় আস্তেসি। অইটাই শেষ দেখা হবে কেনো জানি মনে হচ্ছিলো। দুজন হাত শক্ত করে ধরে রাখসিলাম। আমার বন্ধু রাহাতকে কল দিলাম। ও বল্লো বিয়ে করে ফেলতে। এলাকায় আসো বিয়ে করায় দিবো। আমি ও মোটামোটি প্রিপারেশন নিলাম। ও আগে বলে নেই, আজকে দুপুর ৪ঃ১৫ তে আমরা ধরা খাইসি। অর বাসায় রেগুলার যাই ,এটা  ড্রাইভার গুটি করে লাগাই দিসে।

বালিকার ডিসিশন তাকে বিয়ে করতে হবে। কবে? এখনই। কেমিষ্ট্রি কোচিং এ ছিলাম। তার অত্যাচার এ বের হলাম। কোচিং এর মায়্রে বাপ। আজকে আমার বিয়া। 
৫ঃ১৫
আমরা তখন ফার্মগেট থেকে রিকশা নিয়ে বের হলাম। মজার বিষয় আমার কাছে এক টাকাও নাই, তাহার কাছে হাজার খানেক টাকা। আগারগাও থেকে মিরপুরের দিকে রিকশা নিয়ে রওনা দিলাম। কি যে করব বুঝতেসিলাম না। অনবরত কান্না করতেসিলো। তার ভিতর আমার শশুর আব্বার কথায় বেচারি আরো ভেঙ্গে পড়লো। অলরেডি মেয়ে কে তেয্য করে দিয়া শেষ।  ৭ঃ১৫ তে আমারা মিরপুর থেকে back করে মনিপুরী পাড়া তেজগাঁও এ। কি করব বুঝতেসিনা। আমার বয়স তখন ১৭ আর বালিকার ১৬। সার্টিফিকেট এ আরো কম। রিক্সা থেকে নামার আগে দুজন দুজনের হাত ধরে রাখলাম। ও আমার হাত এতো জোরে ধরে রাখলো হাত ঘেমে শেষ। দুজন দুজনে দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম কিছুক্ষন।
তখনো ওর বাবার ফোন। এবার কচুক্ষেত গেলাম। মিরপুর ১৪ এর মার্ক্স হাস্পাতালে বসে আছি। টাকা নাই। ভিকারির মত। খাবার টাকা ও নাই। ফোনে বেলেন্স নাই। এক ফ্রেন্ড কে ইমার্জেন্সি লোড দিতে বললাম। ২৪ টাকা পাঠাইসিলো। আল্লাহ বাছাইসে কোনো এম্বি পেকেজ ছিলো না ২৪ টাকায়।
একটু পেছনের দিকে যাই। রাইমার যেমন রাগ ছিলো তার চেয়ে বেশী ভালোবাসা ছিলো, এই ধরেন আমার পায়ের নখ থেকে মাথার চুলে তার নজরদারি। মাথা মাসাজ থেকে নখ কাটার দায়িত্ব সে নিয়ে নেয়। তবে আমার এক্স সাবিহা কে নিয়ে খোটা দেয়া শেষ হয় না। ( আসলে কথিত এক্স,৷ never been into relationship with Sabiha।সব গুজব ছিলো). বাসায় রাগারাগি করে না খেয়ে বের হলে রাইমার বাসায় খেতাম। আসলে ঝগড়া না হলেও খেতে যেতাম, উদ্দেশ্য ওর হাতে খাওয়া। এত খাবার নিয়ে খাওয়াতো , তিনজনে শেষ করা যাবে না। জোড় করে মুখে ভড়ে দিতো।
আমরা সবচেয়ে মজা করসি কলেজ লাইফে। রাইমা আমাকে কলেজ বাংক শিখাইসে। ফার্স্ট ক্লাস শেষে বাংক দিয়ে ঘুরতে চলে যেতাম। মাঝে মাঝে হাটার সময় বৃষ্টি আস্তো। ঠান্ডা বাতাস। বৃষ্টি। হাত ধরে হাটা। ও হয়ত খেয়াল করত না, আমি অকে দেখতাম, আর ভাবতাম এই অপার সুন্দর মেয়েটাই আমার বউ হবে। পারবো তো ভালোবাসা দিতে?
একদিন ওর সাথে তমুল ঝগড়া হয়। কি করব? বুঝাতে পারতেসিনা। কান্তেসি। আমি নার্ড ছিলাম মোটামুটি। মেচুরিটির কিঞ্চিৎ অভাবো ছিলো। হাতে ২৬ টা পোচ মারলাম। ব্লিডিং। বাচ্চারা যারা পড়তেসো এই আর্টিকেল টা, তাদের জন্য TIPS - তোমরা ব্লেড দিয়ে হাত কাটবা না৷ অই দাগ আর জীবনে যাবে না। কাটতে হবে অসুধের খোসা দিয়ে। যদিও এটা করবেন না কেউ। স্লিপিন পিল খেয়ে অইটার খোসা দিয়ে কাটলাম হাত। এই কথা শুনে বালিকা তার হাত কেটে ফেল্লো।
রাইমা আমার সাথে ডেইলি দু বার দেখা না করলে সান্তি পেতো না। কলেজে একবার, বিকেলে একবার। 
মাঝখানে খাওয়া দাওয়া কমায় দিলাম। অসুস্থ ছিলাম কিছুদিন। বেচারি নামায আর নফল রোযা রাখতে রাখতে শেষ।
ও ছিলো আর্টসে আর আমি সাইন্স, কলেজের আর্টস আর সাইন্স ভবন আলাদা। টিফিন টাইমে আর্টস ভবনে দেখা করতে যেতাম। একদিন এক সার এসে আমাকে মারা শুরু করলো। ভবের মাইর বুঝেন? ওই টাইপের মাইর আর কি। বললো, "প্রেম করতে আসছিস?" ধুমা ধুম মাইর। আমি করলাম কি, সার কে ধাক্কা দিয়ে পালায় গেলাম। কাহিনি হইলো কি আর কলেজে রটলো কি। পুরা কলেজে প্রচলিত হলো আমাকে আর তাহাকে নাকি কলেজের washroom থেকে পাইসে। এও আদো সম্ভব?
ওর রুমের ফুল ভিউ জানালা দিয়ে বাহরের দৃশ্য দেখতে ভালো লাগতো। নভেম্বর মাস specially। গুমট একটা আবহাওয়া। শিত আসবে আসবে ভাব তবে হাল্কা কুয়াশা, আমার কাধে ওর মাথা, বাহিরে তাকায় কি যেনো ভাবতেসি দুইজন, ঠান্ডা আবহাওয়া হাল্কা কুয়াশা।
১৭ নভেম্বর ২০১২। ঠিক একিভাবে দুজনের বসে থেকে বিকেল দেখা। শিতের আগমনে নিশ্চুপ বিকেল। ঠান্ডা যত বারছে ও আমাকে তত শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে। ও আমার আরো কাছে আসছে, হয়ত আজকে আমরা সত্যি খুব কাছে চলে যাচ্ছি। নভেম্বরের বৃষ্টি চলে আস্লো। আমরা আরো কাছে দুজন দুজনের দিকে চেয়ে আছি। ও আরো কাছে আসছে আমি ও। ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।
What? আমি dream দেখতেসিলাম? তাহলে রাইমা কে?
ঘুম ভেঙ্গে দেখি সবটাই আমার কল্পনা। ফোনে দেখলাম ১৭ নভেম্বর ২০১২। নেই বৃষ্টি ,তবে রোদ আছে কারন বেলা ১২ টা বাজে।
এর পরে আমার জীবনে আসেনি নভেম্বরের বৃষ্টি। তবে নভেম্বরের জীবনে এসেছে শত বৃষ্টি ,  আযো আমি খুজে যাই রাইমাকে - যার আগমনে আসবে ঠান্ডা বাতাস আসবে নভেম্বরের বৃষ্টি।

Comments

Popular posts from this blog

Aziz Hop থেকে Aziz Reza

রোবট 2.0 মুভিতে ওবায়দুল কাদের

নুনুর টুকরা পাওয়া যাচ্ছে Domino's Pizza তে